হজের আরকান বা রোকন সমূহ

হজের আরকান বা রোকন সমূহ 
হজের আরকান চারটি
(ক) ইহরাম বাঁধা।
(খ) আরাফায় অবস্থান করা।
(গ) তাওয়াফুয যিয়ারা।
(ঘ) সাফা ও মারওয়ার মাঝে সাঈ করা।

আর এই চারটি আরকানের কোন একটি রোকন ছুটে গেলে হজ পূর্ণ হবে না।

প্রথম রোকন : ইহরাম বাঁধা।
ইহরামের সংজ্ঞাঃ ইহরাম হলো, ইবাদাতে প্রবেশের নিয়াত করা।
হজের মীকাতঃ হজের ইহরাম বাঁধার মীকাত দু’ প্রকারঃ
(১) সময়ের মীকাত।
(২) স্থানের মীকাত।

এক. সময়ের মীকাতঃ আর তা হলোঃ
হজের মাস সমূহ যে ব্যাপারে আল্লাহ তায়লা বলেনঃ

الحج أشهر معلومات # سورة البقرة، الآية: ১৯৭

অর্থ : হজ হয় সুবিদিত মাসে। [সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত-১৯৭] আর তা হলোঃ শাওয়াল, যুলকাদা, ও যুলহজ।

দুই. স্থানের মীকাতঃ আর তা হলোঃ ঐ সীমা সমূহ যা হাজী সাহেবদের জন্য বিনা ইহরামে অতিক্রম করে মক্কার দিকে যাওয়া ঠিক নয়। আর তা হলো পাঁচটিঃ

প্রথমঃ (যুলহুলাইফা) বর্তমানে এর নাম আবারে আলী’’ ইহা মদিনা বাসীদের মীকাত, ইহা মক্কা হতে (৩৩৬) কিঃ মিঃ অর্থাৎ ২২৪ মাইল দূরে অবস্থিত।

দ্বিতীয়ঃ (আল-জুহ্ফা) ইহা একটি গ্রাম, সে গ্রাম ও লোহিত সাগরের মাঝে দূরত্ব হলো (১০) কিঃ মিঃ, ইহা মক্কা হতে (১৮০) কিঃ মিঃ অর্থাৎ (১২০) মাইল দূরে অবস্থিত। আর ইহা মিসর, সিরীয়া, মরক্ক ও এদের পিছনে বসবাস কারী স্পেন, রূম ও তিক্রূর বাসীদের মীকাত। বর্তমানে মানুষ (রাবেগ) হতে ইহরাম বাঁধে। কারণ ইহা তার কিছুটা বরাবর।

তৃতীয়ঃ (ইয়ালামলাম) বর্তমানে ইহা (আস্সাদীয়া) নামে পরিচিত। আর ইহা তুহামাহ (সারিবদ্ধ) পর্বত সমূহের একটি পর্বত। ইহা মক্কা হতে (৭২) কিঃ মিঃ অর্থাৎ (৪৮) মাইল দূরে অবস্থিত। ইহা ইয়েমেন আহলে জাওয়াহ, ভারতীয় উপমহাদেশের ও চীন বাসীদের মীকাত।

চতুর্থঃ (ক্বারনু মানাযেল) বর্তমানে এর নাম আস্সাইলুল কাবীর’’ ইহা মক্কা হতে (৭২) কিঃ মিঃ অর্থাৎ (৪৮) মাইল দূরে অবস্থিত। আর ইহা নাজদ ও ত্বায়েফ বাসীদের মীকাত।

পঞ্চমঃ (যাতে ইর্ক্ব) ইহা বর্তমানে (আয্যারীবাহ) নামে পরিচিত, এর নাম যাতে ইর্ক্ব রাখা হয়েছে। কারণ তথায় ইর্ক্ব আছে। আর ইর্ক্ব হলো ছোট পর্বত। ইহা মক্কা হতে (৭২) কিঃ মিঃ অর্থাৎ (৪৮) মাইল দূরে অবস্থিত। ইহা প্রাচ্য বাসীদের, ইরাক্ব ও ইরান বাসীদের মীকাত।

ইহা স্থানের মীকাত- ঐ নির্ধারিত সীমা সমূহ যা বিনা ইহরামে অতিক্রম করে মক্কার দিকে যাওয়া কোন হজ ও উমরাহ কারীর জন্য ঠিক নয়। এই মীকাত গুলো আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বর্ণনা করে গেছেন।

যেমন- ইবনে আববাস (রাযিআল্লাহু আনহুমার) হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেনঃ

وقت رسول الله–لأهل المدينة ذا الحليفة، ولأهل الشام الجحفة، ولأهل نجد قرن المنازل، ولأهل اليمن يلملم، هن لهن ولمن أةى عليهن من غير أهلهن من أراد الحج أو العمرة، ومن كان دون ذلك فمن حيث أنشأ، حةى أهل مكة من مكة # متفق عليه

অর্থ : রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মদীনা বাসীদের জন্য যুলহুলাইফা। আর সিরীয়া বাসীদের জন্য আল-জুহ্ফাহ। আর নাজদ বাসীদের জন্য ক্বার্নুল মানাযেল। ইয়েমেন বাসীদের জন্য ইয়ালামলাম নির্ধারণ করেছেন। ঐ মীকাত গুলো ঐ এলাকা বাসীদের জন্য। আর যারা হজ ও উমরাহ করার উদ্দেশ্যে ঐ স্থানে পৌঁছবে, তাদের জন্যও মীকাত নির্ধারিত হল। আর যারা মীকাতের ভিতরে অবস্থান করে তাদের ইহরাম বাঁধার স্থান হবে তাদের নিজস্ব অবস্থান স্থল, এমনকি মক্কার লোক মক্কাতেই ইহরাম বাঁধবে। [বুখারী মুসলিম ]

ولمسلم من حديث جابر -: مهل أهل العراق ذات عرق.

অর্থ : মুসলিম শরীফে জাবির (রাযিআল্লাহু আনহুমা) এর হাদীসে আছে। ইরাক্ব বাসীদের ইহরাম বাঁধার স্থান হলো যাতে ইর্ক্ব।

যে ব্যক্তি ঐ মীকাত সমূহের কোন একটি মীকাত দিয়ে অতিক্রম করবে না, সে ঐ সময় ইহরাম বাঁধবে যখন সে জানতে পারবে যে, সে ঐ মীকাত সমূহের একটি মীকাতের বরাবর হয়েছে। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি আকাশ পথে বিমানে আরোহণ করবে সে ঐ মীকাত সমূহের যে কোন একটি মীকাতের নিকটবর্তী হলে সে ইহরাম বাঁধবে। বিমানে আরোহী ব্যক্তির জন্য জিদ্দা এয়ার পোর্টে নেমে ইহরাম বাঁধা ঠিক হবে না, যেমনটি কিছু হাজী সাহেবগণ করে থাকেন।

কারণ জিদ্দা শুধু জিদ্দা বাসীদের মীকাত বা জিদ্দা তাদের জন্য মীকাত যারা তথা হতে হজ ও উম্রার নিয়াত করবে। তাই জিদ্দা বাসী ছাড়া যে কেও তথা হতে ইহরাম বাঁধলো সে (হজের) একটি ওয়াজিব পরিত্যাগ করলো। আর তা হলো মীকাত হতে ইহরাম বাঁধা। এর কারণে তার উপর একটি ফিদ্য়া অপরিহার্য হবে। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি বিনা ইহরামে মীকাত অতিক্রম করবে তার কর্তব্য হবে তথায় ফিরে যেয়ে ইহরাম বেঁধে আসা। আর সে যদি তথায় ফিরে না যায় বরং যে স্থানে পৌঁছেছে সে স্থান হতেই ইহরাম বেঁধে নেয় তবে তার উপরও একটি ফিদ্য়াহ অপরিহার্য হবে। আর তা হল একটি বক্রি জবেহ করা, বা উট ও গরুর এক সপ্তাংশে অংশীদার হওয়া, আর তা হারামের মিসকীনদের মাঝে বিতরণ করা, এবং তা হতে কিছু ভক্ষণ না করা।

হজ আদায়ের পদ্ধতিঃ ইহরাম বাঁধার পূর্বে গোসল করে পরিস্কার পরিছন্ন হয়ে, চুলের যা কর্তন করা বৈধ তা কর্তন করে শরীরে সুগন্ধি লাগিয়ে ইহরামের জন্য প্রস্ততি নেওয়া মুস্তাহাব। পুরুষ লোক সিলাই যুক্ত কাপড় খুলে ফেলবে। পরিস্কার পরিছন্ন সাদা দু’টি-লুঙ্গী ও চাদর পরিধান করবে। সঠিকমতে ইহরামের জন্য কোন বিশেষ সালাত (নামায) নেই, তবে ইহরাম বাঁধাটা যদি কোন ফরজ নামাযের সময় হয়, তবে ফরজ নামাযের পর ইহরাম বাঁধবে, কারণ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফরজ নামাযের পর ইহরাম বেঁধে ছিলেন।

অতঃপর তিন প্রকার হজ- তামাত্তু, ক্বিরান, ইফরাদ যেটার ইচ্ছা করবে সেটার ইহরাম বাঁধবে।

এক. তামাত্তু হজের সংজ্ঞাঃ হজের মাসে উম্রার ইহরাম বেঁধে তা পুরা করে ঐ বছরেই হজের ইহরাম বাঁধা হলো তামাত্তু হজ।

দুই. ক্বিরান হজের সংজ্ঞাঃ হজ ও উম্রার এক সাথে ইহরাম বাঁধা, অথবা প্রথমে উম্রার ইহরাম বাঁধা, পরে উম্রার তাওয়াফ শুরু করার আগেই হজকে উম্রার সাথে জড়িত করে নেওয়াই ক্বিরান হজ। অতঃপর মীকাত হতে হজ ও উম্রার উভয়ের নিয়াত করবে বা উম্রার তাওয়াফ শুরু করার আগেই হজ ও উম্রা উভয়ের নিয়াত করবে। তারপর হজ ও উম্রা উভয়ের তাওয়াফ ও সা’ঈ করবে।

তিন. ইফরাদ হজের সংজ্ঞাঃ মীকাত হতে শুধু হজের ইহরাম বাঁধা ও হজের সকল কর্ম সম্পাদন করা পর্যন্ত ইহরাম অবস্থায় থাকা হলো ইফরাদ হজ।

মাসজিদে হারামের অধিবাসী নয় এমন-তামাত্তু ও ক্বিরান কারীর উপর হাদী অপরিহার্য। তিন প্রকার হজের কোনটি উত্তম এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। বিদ্যানগণের মধ্যে কিছু কিছু বড় মুহাক্কেকীনদের নিকট তামাত্তু হজ উত্তম। তারপর যখন এই তিন প্রকার হজের যে কোন একটি হজের ইহরাম বাঁধবে, তখন ইহরামের পর লাববাইক বলবেঃ

لبيك اللهم لبيك، لبيك لا شريك لك لبيك، إن الحمد والنعمة لك والملك لا شريك لك.

উচ্চারণঃ লাববাইক আল্লাহুম্মা লাববাইক, লাববাইকা লা-শারীকা লাকা লাববাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নিমাতা লাকা ওয়াল মুল্ক লা-শারীকা লাকা। তালবীয়াহ বেশী বেশী পাঠ করবে। পুরুষ লোক উচ্চ-শব্দে পাঠ করবে।

দ্বিতীয় রোকন : আরাফায় অবস্থান।
কারণ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ

الحج عرفة # رواه أحمد وأصحاب السنن

অর্থ : আরাফার অবস্থানই হজ। [হাদীসটি আহমাদ ও আসহাবুস সুনান বর্ণনা করেছেন]

তৃতীয় রোকন : তাওয়াফুল ইফাযা।
কারণ আল্লাহ তায়লা বলেনঃ

وليطوفوا بالبيت العتيق# سورة الحج، الآية: ২৯

অর্থ : এবং তাওয়াফ করে প্রাচীন গৃহের। [সূরা আল-হজ-আয়াত-২৯]

চতুর্থ রোকন : সা’ঈ করা।

কারণ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ

اسعوا فإن الله كتب عليكم السعي # رواه الإمام أحمد والبيهقي.

অর্থ : তোমরা সা’ঈ কর, কারণ আল্লাহ তোমাদের উপর সা’ঈ লিখে দিয়েছেন। [হাদীসটি ইমাম আহমাদ ও বাইহাকী বর্ণনা করেছেন ]