হজ ফরজ হওয়ার শর্তসমূহ

হজ ফরজ হওয়ার শর্ত সমূহ 
(ক) হজ ফরজ হয় পাঁচটি শর্তে এতে বিদ্যানগণের মতনৈক্য নেই। আর তা হলোঃ ইসলাম বা মুসলিম হওয়া, জ্ঞানবান হওয়া, প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া, স্বাধীন হওয়া, ও সামর্থ্য থাকা। তবে মহিলার উপর হজ ফরজ হওয়ার জন্য হজের সফরে তার সাথে মাহ্রাম থাকা আবশ্যক।

কারণ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন

لا يحل لامرأة تؤمن بالله واليوم الآخر تسافر مسيرة يوم إلا ومعها ذو محرم # متفق عليه

অর্থ : আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখে এমন মহিলার জন্য বিনা মাহ্রামে (বিবাহ বন্ধন নিষিদ্ধ এমন পুরুষ।) একদিনের দূরত্বের পথও সফর করা বৈধ নয়। আবু হুরায়রা (রাযিআল্লাহু আনহু) এই হাদীসটি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন। [বুখারী ও মুসলিম]

ফিকাহ শাস্ত্রবিদগণ এই শর্তগুলোকে তিন ভাগে বিভক্ত করেছেনঃ

প্রথমতঃ হজ সহীহ ও ওয়াজিব হওয়ার জন্য শর্ত, তা হলোঃ ইসলাম ও জ্ঞান, তাই কাফির ও পাগলের উপর হজ ফরজ নয়। তাহাদের পক্ষ হতে হজ শুদ্ধও হবে না। কারণ তাহারা ইবাদাত কারীদের অন্তর্ভুক্ত নয়।

দ্বিতীয়তঃ যা ওয়াজিব ও যথেষ্ট হওয়ার জন্য শর্ত, তা হলোঃ প্রাপ্ত বয়স্ক ও স্বাধীন হওয়া, ইহাদের (হজ) সহীহ হওয়ার শর্ত নয়। তাই যদি বাচ্চা ও দাস হজ করে, তাহাদের হজ সহীহ হবে। তবে তাহাদের এই হজ ইসলামের ফরজ হজ হিসাবে যথেষ্ট হবে না।

তৃতীয়তঃ যা শুধু ফরজ হওয়ার জন্য শর্ত। আর তা হলো সামর্থ্যতা। তবে সামর্থ্যহীন ব্যক্তি যদি কষ্ট করে হজ করে এবং যদি পাথেয় ও যানবাহন ছাড়াই হজে চলে যায় তবে তার হজ সহীহ হবে।

(খ) হজ আদায়ে প্রতিনিধি নিযুক্ত করার বিধানঃ
যে ব্যক্তি হজ আদায়ের সামর্থ্যবান হওয়ার পূর্বে মারা যাবে, তার উপর ফরজ হবে না। এতে বিদ্যানগণের মাঝে কোন মতনৈক্য নেই। তবে যে ব্যক্তি হজ আদায়ের সামর্থ্যবান হওয়ার পর মারা যাবে, তার উপর হতে মৃত্যুর কারণে ফরজ সাকেত হবে কি হবে না এ ব্যাপারে মতনৈক্য রয়েছে। তবে সঠিক মত হলো মৃত্যু ব্যক্তির পক্ষ হতে হজের ফারযিয়াত সাকেত হবে না। মৃত্যু ব্যক্তির ওয়ারিসদের উপর তার পক্ষ হতে তার মাল হতে হজ করা অপরিহার্য হবে, সে তার পক্ষ থেকে হজ আদায়ের ওসিয়াত করে যান আর নাই যান। তা তার উপর সব দিক দিয়ে ঋণের ন্যায় ওয়াজিব হিসাবে সাব্যস্ত হয়েছে। কারণ ইবনে আববাস (রাযিআল্লাহু আনহুমা) হাদীস বর্ণনা করেছেন। জনৈক মহিলা হজ করার নজর মেনে মারা যায়। অতঃপর তার ভাই নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট এসে তাঁকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেন, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বল্লেনঃ

أرأيت لو كان على أختك دين أكنت قاضيه؟ قال: نعم، قال: فاقضوا الله فهو أحق بالوفاء # رواه النسائي

অর্থ : তোমার কি মত ? যদি তোমার বোনের উপর ঋণ থাকতো তাহলে তুমি কি তা আদায় করতেনা ? সে বল্ল হ্যাঁ। তারপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বল্লেন আল্লাহর ঋণ আদায় কর, কারণ আল্লাহর ঋণ আদায় করা অধিক যুক্তি যুক্ত। [নাসায়ী]

(গ) যে ব্যক্তি নিজে হজ করে নাই সে অন্যের পক্ষ হতে বদল হজ করতে পারবে কি ? যে ব্যক্তি প্রথমে নিজের হজ করে নাই সে অন্যের পক্ষ হতে বদল হজ করতে পারবেনা। ইহা বিদ্যানগণের সঠিক মত। কারণ এ ব্যাপারে একটি প্রসিদ্ধ হাদীস রয়েছে, আর তা হলোঃ

أن النبي  سمع رجلاً يقول: لبيك عن شبرمة، قال: من شبرمة؟ قال: أخ لي أو قريب لي، فقال عليه الصلاة والسلام: حجة عن نفسك؟ قال لا. قال: حج عن نفسك ثم حج عن شبرمة # رواه أحمد وأبو داود وابن ماجه والبيهقي وصححه

অর্থ : নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক ব্যক্তিকে লাববাইক আন শুব্রামাহ বলতে শুনলেন। অতঃপর (তাকে) বল্লেন শুব্রামাহ কে ? সে বল্ল আমার ভাই বা আমার নিকট আত্নীয়। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বল্লেন তুমি তোমার হজ করেছ ? সে বল্ল না। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বল্লেন আগে তুমি নিজের হজ কর, তারপর শুব্রামার হজ কর। [এই হাদীসটি ইমাম আহমাদ আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ ও বাইহাকী বর্ণনা করেছেন, ইমাম বাইহাকী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন]

সামর্থ্যহীন অপারগ ব্যক্তির পক্ষ হতে বদল হজ সঠিক মতে সহীহ হবে। কারণ এ ব্যাপারে ফজল বিন আববাস (রাযিআল্লাহু আনহুমার) একটি হাদীস রয়েছেঃ

وفيه أن امرأة من خثعم قالت: يارسول الله إن فريضة الله على عباده في الحج أدركت أبي شيخاً كبيراً لا يثبت على الراحلة أفأحج عنه؟ قال: نعم وذلك في حجة الوداع # متفق عليه اللفظ للبخاري

অর্থ : আর তাতে আছে খাছআমা কাবিলার জনৈক মহিলা বল্ল হে আল্লাহর রাসূল ! আমার পিতা অতি বৃদ্ধ সে যানবাহনে স্থীর থাকতে পারেনা। তার উপর আল্লাহর ফারিযাহ-হজ ফরজ হয়েছে। আমি কি তাঁর পক্ষ হতে বদল হজ করতে পারবো ? রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বল্লেন হ্যাঁ। তার পক্ষ হতে বদল হজ কর। এই ঘটনা বিদায় হজে ঘটে ছিল। [বুখারী ও মুসলিম, তবে শব্দ গুলো বুখারীর ]

(ঘ) হজ অবিলম্বে ফরজ না বিলম্বে ফরজ ?
হজ ওয়াজিব হওয়ার শর্ত পুরা হওয়ার সাথে সাথেই হজ ফরজ হবে, ইহা বিদ্যানগণের গ্রহণ যোগ্য মত। কারণ এ ব্যাপারে আল্লাহর বাণী আম বা ব্যাপক রয়েছে যেমনঃ

ولله على النّاس حج البيت من استطاع إليه سبيل# سورة آل عمران،الآية: ৯৭

অর্থ : মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ গৃহের হজ করা তার অবশ্য কর্তব্য। [সূরা আলি-ইমরান-আয়াত-৯৭]

আরো আল্লাহর বাণী হলোঃ

وأتموا الحج والعمرة لله# سورة البقرة، الآية: ১৯৬

অর্থ : তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ ও উমরাহ পূর্ণ কর। [সূরা আল-বাক্বারাহ-আয়াত-১৯৬]

ইবনে আববাস (রাযিআল্লাহু আনহুমা) হতে হাদীস বর্ণিত হয়েছে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ

تعجلوا إلى الحج، يعني الفريضة، فإن أحدكم لا يدري ما يعرض له # رواه أبو داود وأحمد والحاكم وصححه.

অর্থ : তোমরা ফরজ হজের জন্য তাড়াতাড়ী কর, কেননা তোমাদের কেহই একথা জানেনা যে, তাহার ভাগ্যে কি রহিয়াছে। [হাদীসটি আবু দাউদ, আহমাদ ও হাকেম বর্ণনা করেছেন, হাকেম হাদীসটি সহীহ বলেছেন ]