নারীদের হজের প্রয়োজনীয় মাসআলা

মুফতী মুতিউর রাহমান : সামর্থ্যবান নারী-পুরুষ সবার ওপরই হজ ফরজ। প্রতি বছর সারাবিশ্ব থেকেই অসংখ্য নর-নারী হজ করতে মক্কায় আসেন। সেক্ষেত্রে বিশেষত নারীরা হজের অনেক মাসালার সম্মুখীন হন। কিন্তু সঠিক সমাধান খুঁজে পাওয়া না। এ এ লেখায় নারীদের হজের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা উপস্থাপন করা হল।

নারীরা কোনো অবস্থাতেই মাহরাম ছাড়া হজ করতে পারবেন না। অনেকে মনে করেন, দলবদ্ধভাবে হজে গেলে যে কোনো একজনের মাহরাম থাকলে অন্যদের আর মাহরাম লাগবে না, কিন্তু এটা একটা মারাত্মক ভুল। হজে প্রত্যেক নারীর সঙ্গে তার নিজ মাহরাম থাকতেই হবে। হ্যাঁ, এমন হতে পারে যে এক ব্যক্তি কয়েকজনের মাহরাম, সুতরাং তিনি তাদের সঙ্গে নিয়ে হজে যেতে পারবেন। যেমন একজন পিতা তার কয়েকজন মেয়েকে নিয়ে হজে গেলেন, মেয়েদের প্রত্যেকেরই যেহেতু পিতা মাহরাম। সুতরাং তাতে অসুবিধা নেই।

অনেক নারী বোন ও ভগ্নিপতির সঙ্গে হজে যেতে চান। কিন্তু এটা জায়েজ নয়। কারণ ভগ্নিপতি শ্যালিকার জন্য মাহরাম নয়। সুতরাং বোন সঙ্গে থাকলেও ভগ্নিপতির সঙ্গে হজে যাওয়া নারীদের জন্য জায়েজ নয়। শ্যালিকার নিজের মাহরাম সঙ্গে থাকতে হবে।

দুই. ফরজ হজের জন্য স্বামীর অনুমতির প্রয়োজন নেই। মাহরাম পাওয়া গেলে স্বামীর অনুমতি ছাড়াও ফরজ হজে যাওয়া জায়েজ। তবে হজের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ, মহান ও ফজিলতপূর্ণ কাজে স্বামীর সঙ্গে আলোচনা করে নেয়া উচিত। স্বামীকে সম্মত করে হজে যাওয়াই উত্তম। (আলমগীরি, আপকে মাসায়েল ৪/২০-২১)

তিন. স্বামী মৃত্যুর ইদ্দত অথবা তালাকের ইদ্দত পালনকালে নারীরা হজে যেতে পারবেন না। (রহিমিয়া ৮/৬২-৬৩)
চার. হজের ইহরাম বাঁধার সময় নারীদের হায়েজ (পিরিয়ড) হলেও তারা গোসল করে ইহরাম বাঁধবেন।

হায়েজ (পিরিয়ড) অবস্থায় নারীরা শুধু তাওয়াফ ব্যতীত হজের অন্য সমস্ত আরকান পালন করতে পারবেন। হায়েজ শেষ হওয়ার পর গোসল করে তাওয়াফ করতে হবে। হায়েজের কারণে তাওয়াফ বিলম্বিত হলে কোনো গোনাহ হবে না। সুতরাং ওষুধ-বড়ি খেয়ে হায়েজ বন্ধ রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। এ নিয়ে দুশ্চিন্তা বা মনোক্ষুণœ হওয়ারও কোনো কারণ নেই। তবে হায়েজ বন্ধ হওয়ার আগেই ফেরত ফ্লাইটের তারিখ হয়ে গেলে ওষুধ খেয়ে হায়েজ বন্ধ করে তাওয়াফ করা যাবে। যদি শুরু থেকেই ওষুধ-বড়ি খেয়ে পিরিয়ড বন্ধ রেখে কেউ হজের সমস্ত কাজ করেন, তাতেও শরিয়তের দৃষ্টিতে কোনো আপত্তি নেই। (মাহমুদিয়া ১৫/৪৯১, তাতার খানিয়া, ২/৪৭১ ফাতহুল কাদীর ২/৩৩৭ রহিমিয়া ৮/৮৭)

পাঁচ. গর্ভবতী নারীরাও হজ করতে পারবেন। গর্ভাবস্থায় হজ করতে শরিয়তে নিষেধ নেই। (আপকে মাসায়েল ৪/১৯)।

ছয়. হায়েজ অবস্থায় আরাকান ময়দানে, যা অন্যত্র পবিত্র কুরআনের ছোট কোনো সুরা (যেমন সুরা এখলাস, সুরা ফাতেহা) অথবা দুআর আয়াত তিলাওতের নিয়তে নয়, দুআর নিয়তে পড়া যাবে। (রহিমিয়া ৮/৯১) বড় সুরা বা বেশি আয়াত পড়া যাবে না। তিলাওয়াতের নিয়তে পবিত্র কুরআন পাঠ করা যাবে না।

সাত. নারীদের বদলি হজ নারীরা করতে পারবেন। তবে পুরুষদের দিয়ে করানোই উত্তম। (রহিমিয়া ৮/১২৩)।

আট. ভিড় এড়ানোর জন্য নারীদের রাতের বেলায় তাওয়াফ করাই উত্তম।

নারীরা ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার জন্য সারা মাথা থেকে আঙুলের এক-তৃতীয়াংশ পরিমাণ চুল কাটতে হবে।

দশ. নিজের চুল নিজেই অথবা হালাল হয়ে যাওয়া অন্য কোনো নারীর দ্বারা কাটাতে পারবেন। (মাহমুদিয়া ১৫/৪২১ আপকে মাসায়েল ৪/৯৩)
এগার. হজের সফরেও পর্দার প্রতি সম্পূর্ণ লক্ষ্য রাখতে হবে। হজের কারণে তো আর পর্দার বিধান শিথিল হয় না। হজের পবিত্র সফরে পর্দা লঙ্ঘনের গোনাহ যেন না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে।