অন্যের দোষ-ত্রুটি খুঁজে বেড়ালে কী হবে?

অনুমানের ওপর নির্ভর করে কারো নামে অপবাদ আরোপ করা একটি নিন্দনীয় কাজ। এটি নৈতিক দিক থেকে যেমন গর্হিত, তেমন ধর্মীয় দিক থেকেও নিন্দনীয় ও পাপের কাজ বলে বিবেচিত। রাসুল [সা.] তার অনুসারীদের শিক্ষা দিয়েছেন, তারা যেন অন্যের দোষ অন্বেষণে ব্যস্ত না থাকে। এ ধরনের পরচর্চাকারীরা যে মানুষের পারিবারিক, সামাজিক, এমনকি রাষ্ট্রীয় জীবনের জন্য বিড়ম্বনা ডেকে আনে, তা একটি বাস্তবতা। আবু হুরায়রা [রা.] থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন, রাসুল [সা.] বলেছেন, সাবধান! তোমরা ধারণা-অনুমান থেকে বিরত থাক। কারণ ধারণা-অনুমান সবচেয়ে বড় মিথ্যা [বুখারি, মুসলিম]।

বিলাল ইবনে সাদ [রা.] থেকে বর্ণিত মুআবিয়া [রা.] আবু দারদা [রা.]-কে লিখে পাঠালেন, আমাকে দামেস্কের দুর্নীতিবাজ লোকদের তালিকা লিখে পাঠান। আবু দারদা [রা.] উত্তরে বলেন, দামেস্কের দুর্নীতিবাজ লোকদের সঙ্গে আমার কী সর্ম্পক? আমি কি তাদের চিনি? তার ছেলে বিলল বললেন, আমি তাদের তালিকা তৈরি করে দিচ্ছি। অতএব তিনি তাদের তালিকা প্রস্তুত করলেন। আবু দারদা [রা.] জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কীভাবে জানতে পারলে? তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হলেই কেবল তোমার পক্ষে তাদের নাম জানা সম্ভব। অতএব তালিকার শীর্ষে তোমার নাম লিখ। আবু দারদা [রা.] তাদের নামের এ তালিকা পাঠাননি। [আদাবুল মুফরাদ]। ইসলামে অন্যের দোষ খুঁজে বেড়ানো নিষিদ্ধ। এ হাদিসে উল্লিখিত ধরনের গতিবিধি কেবল অন্যের দোষত্র“টি অনুসন্ধানে আÍতৃপ্তি লাভকারী লোকদেরই হতে পারে। এ কারণে আবু দারদা [রা.] নিছক অনুমানের ওপর ভিত্তি করে দুর্নীতিবাজদের তালিকা তৈরি করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। ইবনে মাসউদ [রা.] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল [সা.] বলেছেন, আমার সাহাবিদের কেউ যেন আমার কাছে অন্য কারো দোষ বর্ণনা না করে। কারণ আমি চাই, যখন আমি তোমাদের কাছে আসব, তখন যেন পরিষ্কার হৃদয়-মন দিয়ে আসতে পারি। [আবু দাউদ ও তিরমিজি থেকে রিয়াদুস সালেহিনে]

হজরত আবু হুরায়রা [রা.] থেকে বর্ণিত। রাসুল [সা.] বলেন, তোমরা কি জান, গিবত কী? সাহাবিরা বলেন, আল্লাহ ও তার রাসুলই ভালো জানেন। তিনি বলেন, তোমার ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে। বলা হলো, আমি যা বললাম, তা যদি তার মধ্যে থাকে, তবে আপনার কী মত? তিনি বলেন, যেসব দোষ তুমি বর্ণনা করেছো, তা যদি তার মধ্যে থাকে, তবে তুমি তার গিবত করলে। আর যদি সে দোষ তার মধ্যে না থাকে, তবে তুমি তার প্রতি অপবাদ আরোপ করলে। [সহিহ মুসলিম থেকে মিশকাতে] উপরোক্ত হাদিসগুলোর আলোকে আমাদের সবারই উচিত অনুমাননির্ভর বক্তব্যে তথা গিবত-অপবাদ থেকে মুক্ত থাকা। আল্লাহ আমাদের এ পাপ থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন