একজন নারী কখন তার হজ বদলি করাতে পারবেন

১. মাসআলা : মাহরাম পুরুষ ছাড়া মহিলাদের হজের সফরে যাওয়া জায়েয নয়। অন্য মহিলাদের সঙ্গী হয়েও হজে যাওয়া নাজায়েয। তারা স্বামী বা মাহরাম পুরুষের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। যদি মাহরাম পুরুষের ব্যবস্থা না হয় আর এভাবেই এমন বার্ধক্য এসে যায় যে, নিজে হজ করার শক্তি না থাকে তাহলে ঐ সময় কাউকে পাঠিয়ে বদলি হজ করিয়ে নিবে বা বদলি হজের অসিয়ত করে যাবে।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো নারী মাহরাম ছাড়া সফর করবে না।’ জনৈক ব্যক্তি আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি অমুক অমুক বাহিনীর সাথে জিহাদে যাওয়ার ইরাদা করেছি। এ দিকে আমার স্ত্রীও হজে যাওয়ার ইচ্ছা করেছে (আমি এখন কী করতে পারি?) রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তুমিও তার সাথে (হজে) যাও।’ [সহিহ বুখারি ১/২৫০; সহিহ মুসলিম ১/৪৩৪]

বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত হাসান বসরী রাহ. বলেছেন, ‘নারী মাহরাম ছাড়া হজ করবে না।’ রাই-এর অধিবাসিনী একজন নারী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.-এর নিকট পত্র লিখলেন যে, তিনি একজন বিত্তবান নারী। কিন্তু তার স্বামী নেই এবং কোনো মাহরাম পুরুষও নেই। আর ইতিপূর্বে তিনি হজ করেননি। (এখন তিনি কি স্বামী বা মাহরাম ছাড়া হজে যেতে পারবেন?) উত্তরে ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. লিখেছেন-

إِنَّ هَذَا مِنْ أَمْنِ السَّبِيْلِ الَّذِيْ قَالَ اللهُ، وَلَيْسَ لَكِ مَحْرَمٌ فَلاَ تَحُجِّيْ إِلَّا مَعَ بَعْلٍ أَوْ مَحْرَمٍ.

‘মহিলাদের জন্য স্বামী বা মাহরাম পুরুষের ব্যবস্থা হওয়া হজের সামর্থ্যের অন্তর্ভুক্ত, যা আল্লাহ তাআলা কুরআন মজীদের এই আয়াতে বলেছেন-

وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا

অর্থাৎ মানুষের মধ্যে যারা সেখানে (কাবা ঘরে) পৌঁছার সামর্থ্য রাখে তাদের উপর আল্লাহর জন্য এ ঘরের হজ করা ফরজ। (সূরা আলে ইমরান : ৯৭) আপনার তো মাহরাম পুরুষ নেই। স্বামী বা মাহরাম ছাড়া আপনি হজে যাবেন না।’

অনুরূপ সিদ্ধান্ত তাউস, আমের, ইকরামা ও উমর ইবনে আবদুল আযীয রাহ. প্রমুখ বিখ্যাত মনীষী তাবেয়ীদের থেকেও বর্ণিত আছে। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৮/৬৩৬-৬৪১) [ফাতহুল কাদীর ২/৩৩০; মানাসিক ৪৩৬; আলবাহরুর রায়েক ২/৩১৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৬৫]

২. মাসআলা : যার বদলি হজ আদায় করা হবে তার পক্ষ থেকে আদেশ বা অনুমতি থাকতে হবে। তার আদেশ বা অনুমতি ছাড়া কেউ তার পক্ষ থেকে বদলি হজ করলে এটি তার নফল হজ গণ্য হবে। এর দ্বারা তার ফরজ হজ আদায় হবে না।[মানাসিক ৪৩৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫৯৯]

৩. মাসআলা : কোনো ব্যক্তির উপর হজ ফরজ ছিল, কিন্তু সে তা আদায় করেনি এবং তার পক্ষ থেকে আদায়ের অসিয়তও করেনি। এ অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। তার পক্ষ থেকে ওয়ারিশদের বদলি হজ করা বা করানো জরুরি নয়। তবে কোনো ওয়ারিশ বা অন্য কেউ স্বেচ্ছায় তার পক্ষ থেকে বদলি হজ করলে এর দ্বারা ঐ মৃত ব্যক্তির ফরজ হজ আদায় হয়ে যাওয়ার আশা করা যায়।

হযরত বুরাইদাহ রা. বলেন, জনৈক মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার মা ইন্তিকাল করেছেন। তিনি হজ করেননি। আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ করতে পারি?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হ্যাঁ, তুমি তার পক্ষ থেকে হজ করো।’ (সহিহ মুসলিম ১/৩৬২)

হযরত আতা রাহ. বলেছেন, ‘অসিয়ত না করলেও মৃতের পক্ষ থেকে হজ করানো যাবে।’ উল্লেখ্য, উপরোক্ত ক্ষেত্রে ওয়ারিশগণ যদি মাইয়্যেতের অবণ্টিত পরিত্যক্ত সম্পদ দ্বারা বদলি হজ করাতে চান তাহলে দুটি শর্ত অবশ্যপালনীয় : ক) বদলি হজের অসিয়ত না করার কারণে মৃতের সকল সম্পদের বর্তমান মালিক যেহেতু ওয়ারিশগণ তাই উক্ত সম্পদ দ্বারা বদলি হজ করাতে হলে সকল ওয়ারিশের স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি থাকতে হবে। খ) ওয়ারিশদের কেউ যদি নাবালেগ হয় কিংবা কোনো ওয়ারিশের যদি সম্মতি না থাকে তাহলে তার অংশ থেকে বদলি হজের জন্য কিছুই নেওয়া যাবে না। দেখুন : মানাসিক ৪৩৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫৯৯; গুনইয়াতুন নাসিক ৩২২, ৩২৮