ইসলামের দৃষ্টিতে ন্যায়পরায়ণতা

ইসলাম মানুষের মধ্যে ন্যায়বোধ প্রতিষ্ঠা করে। অন্যায় থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। পৃথিবীর সূচনা থেকে শেষ পর্যন্ত, হজরত আদম থেকে হজরত মোহাম্মাদ [সা.] পর্যন্ত সব নবিদের ন্যায় প্রতিষ্ঠার মহান উদ্দেশ্য নিয়ে পাঠানো হয়েছে। ন্যায় প্রতিষ্ঠা এবং অন্যায় দূর করাই ছিল ধরাধামে প্রেরিত নবি-রাসুলদের আগমনগত মৌলিক উদ্দেশ্য। ন্যায়পরায়ণতা ইসলামী চরিত্রের বিশেষ একটি দিক। ন্যায়পরায়ণতার গুণ ছাড়া কোনো মানুষ প্রকৃত মানুষ হতে পারে না। যে মানুষের মাঝে ন্যায়পরায়ণতা নেই সে মানুষই না। ন্যায়পরায়ণতা ও ন্যায়জ্ঞান নবি-রাসুলদের গুণ। আদর্শ মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে, ন্যায়পরায়ণতার গুণে গুণান্বিত করতে হবে নিজেকে। অর্জন করতে হবে সৎগুণ। ন্যায়পরায়ণতা এমন একটি গুণ যা চরিত্র ও মানব আত্মায় প্রশান্তি সৃষ্টি করে। সমাজ-সংসারে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করে এবং বিভিন্ন প্রকার অপরাধ বিমোচনের সহায়তা করে। কোনো সমাজে বা রাষ্ট্রে যদি ন্যায়পরায়ণতার চর্চা হয়, সেখানে কোনো প্রকার অন্যায়, অবিচার থাকাতে পারে না। ন্যায়পরায়ণতা এমন একটি গুণ, মানুষের মাঝে এই একটি গুণ থাকলেই সে আর কোনো অপরাধ করতে পারবে না।

ন্যায়পরায়ণতা মানুষের মাঝে সুস্থ বিবেক তৈরি করে এবং মানুষে মানুষে সৃষ্ট ভেদাভেদ মিটিয়ে দেয়। পবিত্র কোরানে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, ইহসান ও নিকটাত্মীয়দের দান করতে নির্দেশ দেন। [সুরা আল নাহাল: ৯০]। এই মর্মে অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা আরো ইরশাদ করেছেন, ইনসাফ কর, এটা তাকওয়ার অতীব নিকটবর্তী। [সুরা আল মায়িদা: ৮] রাসুল [সা.] এই মর্মে ইরশাদ করেছেন, ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিরা আল্লাহর নিকট নূরের ওপর বসবে। তারা হলো সে সব লোক, যারা বিচার ফয়সালার ক্ষেত্রে, পরিবার-পরিজনের ক্ষেত্রে এবং যে দায়িত্বই পেয়েছে সবক্ষেত্রে ন্যায়পরায়ণতা প্রদর্শন করে। পবিত্র কোরান ও হাদিসের আলোচনার দ্বারা মানব জীবনে ন্যায়পরায়ণতার গুরুত্ব এবং পারলৌকিক জীবনে এর প্রভাবের বিষয়টি প্রমাণিত। একজন মুসলমান হিসেবে, দেশের একজন সুনাগরিক হিসেবে আমাদের সবার উচিত ন্যায়পরায়ণতার এই গুণটিতে নিজের জীবনের জন্য আয়ত্ত করা এবং জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে ন্যায়পরায়ণতার চর্চা করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ন্যায়পরায়ণ হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।