সালামের কিছু ভুল

সালাম মুসলমানদের অভিবাদন শব্দ। সালামে পারস্পরিক মিল মোহাব্বত বৃদ্ধি পায়। নেকি হাসিল হয়। তবে সালাম দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকে ভুল করে থাকেন। কখনো উচ্ছারণগত ভুল কখনো নিয়মগত ভুল। সালামের ভুল নিয়ে আলোচনা করা হলো।

অশুদ্ধ উচ্চারণে সালাম দেওয়া
এটি মারাত্মক ভুল কাজ। আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ হচ্ছে পূর্ণ সালাম। শুধু আসসালামু আলাইকুম বললেও চলবে। তবে উচ্চারণে ভুল করা যাবে না। যেমন অনেকে স্লামালেকুম বলে। এ ধরনের ভুল উচ্চারণ হতে বিরত থাকা আবশ্যক।
বড় বা বয়স্ক মানুষের সালাম না দেওয়া
এটিও ভুল প্রচলন। বড় বা বয়স্ক মানুষ ছোটদের সালাম দিতে কোনো বাধা নেই। তদ্রƒপ শিক্ষক ছাত্রদেরকে এবং পিতা-মাতা সন্তানদেরকে সালাম দিবে। আগে সালামকারী বেশি সওয়াব ও মর্যাদার অধিকারী হয়ে থাকে।
অপরিচিত কাউকে সালাম না দেওয়া
পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেওয়ার নির্দেশ এসেছে। তাই পরিচিত ও মুখ চিনে সালাম দেওয়া গর্হিত ও নিন্দিত কাজ। হাদিসের লঙ্ঘন হবে।
সালাম দেওয়ার সময় মাথা ও বুক ঝুঁকানো
সালাম দেওয়ার সময় মাথা ও বুক ঝুঁকানো নিষেধ। অনেকে পদস্থ বা বড় কোনো ব্যক্তিকে সালাম দেওয়ার সময় এমন করে থাকে। হাদিসে এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়।
সালামের উত্তর দিয়ে আবার সালাম
আপনাকে কেউ সালাম দিল। আপনি উত্তর দেওয়ার পর ওই সালামকারীকে আবার সালাম দিলেন। অনেকে এ কাজটি অজ্ঞতাবশত করে থাকে। উত্তম হল, কারো সালামের অপেক্ষা না করে নিজে আগে সালাম দেওয়া। কিন্তু কেউ আগে সালাম দিয়ে ফেললে তার সালামের উত্তর দেওয়াই নিয়ম। তাকে আবার সালাম দিতে হবে না।
সালামের উত্তর না দিয়ে আবার সালাম
সালাম পাওয়ার পর উত্তর দেওয়াই বিধান। কিন্তু অনেক মানুষকে সালাম দেওয়ার পর উত্তর না দিয়ে সালামদাতাকে আবার সালাম দেয়। এমনটি ঠিক নয়। কারণ, বিধান হল দুজনের একজন সালাম দিবে; আর অপরজন সালামের উত্তর দিবে।
সালাম দেওয়ার পর সালাম দিয়েছি বলা
কাউকে সালাম দেওয়ার পর সালাম না শুনলে বা উত্তর না-দিলে আমরা বলি, ‘আপনাকে সালাম দিয়েছি’। এভাবে বলা ঠিক নয়। তাকে আবার পূর্ণ সালাম দেওয়াই বিধেয়।
দূরের মানুষকে সালাম পাঠানোর পদ্ধতি
কারো কাছে সালাম পাঠানোর দরকার হলে আমরা বলি, অমুককে গিয়ে আমার সালাম দিবেন/বলবেন। এভাবে বলা ঠিক নয়। নিয়ম হল এভাবে বলা, অমুককে আমার পক্ষ থেকে আসসালামু আলাইকুম বলবেন। তদ্রুপ সালাম পৌঁছানোর পরও ‘অমুকে আপনাকে সালাম দিয়েছে’ এ রকম না বলে এভাবে বলা উচিত, অমুক আপনাকে আসসালামু আলাইকুমৃ বলেছে।
এক্ষেত্রে সালামের উত্তরদাতাও কেবল প্রেরককে উত্তর দিবে না। বরং প্রেরক ও বাহক উভয়কে দুআয় শরিক করবে। এভাবে উত্তর দিবে, ওয়া আলাইকা ওয়া আলাইহিস সালাম।
ফোনে বা সাক্ষাতে সালামের আগে হ্যালো বা অন্যকিছু বলা
ফোন বা মোবাইলে সালাম দেওয়ার আগে হ্যালো বা অন্য কোনো কথা বলা ঠিক নয়। আগে সালাম দিবে তারপর অন্য কথা বলবে। হ্যালো বলার দরকার হলে সালাম দেওয়ার পর বলবে। ফোন ছাড়া সাক্ষাতের বেলায়ও কথাবার্তার আগে সালাম দেওয়াই সুন্নত। কেননা রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কথাবার্তা বলার আগে সালাম দিতে হয়। (তিরমিযি, হাদিস নং- ২৬৯৯)
অনুষ্ঠান শেষে বা বিয়ের আকদ হওয়ার পর সালাম
কোনো অনুষ্ঠান বিশেষত দোয়া বা এ ধরনের কোনো মজলিস শেষ হওয়ার পর সালাম দেয়। তদ্রƒপ বিয়ের আকদ হওয়ার পর বর উপস্থিত সবাইকে সালাম দেয়। বর সালাম না দিতে চাইলে বা ভুলে গেলে অন্যরা তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সালাম দেও। এসবই কুসংস্কার ও ভুল প্রচলন। সালাম হবে সাক্ষাতের সময়। সুতরাং কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়ার পর কারো সাথে দেখা হলে তাকে সালাম করবে। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষে সালামের এ নিয়ম কোত্থেকে এল? এসব বর্জন করা উচিত।