সম্পদ হালাল করবে যাকাত

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,‏ ‘আর তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত আদায় করো এবং রুকু কর রুকুকারীদের সঙ্গে।’ সূরা বাকারা : ৪৩।

ইসলাম ধর্মের পঞ্চ স্তম্ভ যাকাত। প্রত্যেক স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক মুসলমান নর-নারীকে প্রতি বছর স্বীয় আয় ও সম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট অংশ, যদি তা ইসলামি শরিয়ত নির্ধারিত সীমা (নিসাব পরিমাণ) অতিক্রম করে তবে, গরীব-দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণের নিয়মকে যাকাত বলা হয়। সাধারণত নির্ধারিত সীমাতিক্রমকারী সম্পত্তির ২.৫ শতাংশ (২.৫%) অংশ বছর শেষে বিতরণ করতে হয়। ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে হজ এবং যাকাতই শুধুমাত্র শর্তসাপেক্ষ যে, তা সম্পদশালীদের জন্য ফরয বা আবশ্যিক হয়। উল্লেখ্য, নিসাব পরিমাণ হলেই যাকাত কোনো ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব হয় এবং তখন তার ওপর ‘যাকাত’ আদায় করা ফরয।

যাকাতের শর্ত : স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক মুসলমান নর-নারীর কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে কিছু শর্তসাপেক্ষে তার ওপর যাকাত ফরয হয়ে থাকে।

যেমন : ১. সম্পদের ওপর পূর্ণ মালিকানা,

২. সম্পদ উৎপাদনক্ষম হওয়া,

৩. নিসাব পরিমাণ সম্পদ,

৪. মৌলিক প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদ থাকা,

৫. ঋণমুক্ত থাকা,

৬. সম্পদ এক বছর আয়ত্তাধীন থাকা।

এসব শর্ত পূরণ হলেই একজন সম্পদশালীর ওপর যাকাত ফরজ হবে। যাকাত বণ্টনের কিছু নির্দিষ্ট খাত রয়েছে। এই খাতগুলো সরাসরি কোরআন দ্বারা নির্দিষ্ট, এবং যেহেতু তা আল্লাহ’র নির্দেশ,

তাই এর বাইরে যাকাত বণ্টন করলে যাকাত আদায় হয় না।

১. মুসলমান ফকির (যার কিছুই নেই),

২. মুসলমান মিসকীন (যার নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই)

৩. যাকাত আদায়ে নিযুক্ত কর্মচারী (যার অন্য জীবিকা নেই)

৪. (অমুসলিমদের) মন জয় করার জন্য,

৫. ক্রীতদাস (মুক্তির উদ্দেশ্যে),

৬. ধনী সম্পদশালী ব্যক্তি যার সম্পদের তুলনায় ঋণ বেশি,

৭. (স্বদেশে ধনী হলেও বিদেশে) আল্লাহর পথে জেহাদে রত ব্যক্তি,

৮. মুসাফির (যিনি ভ্রমণকালে অভাবে পতিত)।

এ আট খাত ছাড়াও আরও কিছু নফল খাত রয়েছে যাদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে। তবে প্রয়োজনীয় সম্পদের যাকাত দিতে হয় না। মুহাম্মদ সা. বলেছেন, বাসস্থানের জন্য নির্মিত ঘরসমূহ, ঘরে ব্যবহার্য দ্রব্যাদি, আরোহণের জন্য পশু, চাষাবাদ ও অন্যান্য আবশ্যকীয় কাজে ব্যবহৃত পশু ও দাস-দাসী, কাঁচা তরিতরকারিসমূহ এবং মৌসুমী ফলসমূহ যা বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না, অল্পদিনে নষ্ট হয়ে যায়, এমন ফসলে যাকাত নেই। যদিও হানাফি মাযহাব অনুসারে নিজে নিজে উৎপন্ন দ্রব্যাদি, যথা বৃক্ষ, ঘাস এবং বাঁশব্যতীত অন্য সমস্ত শস্যাদি, তরিতরকারি ও ফলসমূহের যাকাত দিতে হয়। হাদীসের আলোকে যে সকল সম্পদসমূহকে যাকাত থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, সেগুলো হল, জমি ও বাড়িঘর; মিল, ফ্যাক্টরি, ওয়্যারহাউজ বা গুদাম ইত্যাদি; দোকান; এক বছরের কম বয়সের গবাদি পশু; ব্যবহার্য যাবতীয় পোশাক; বই, খাতা, কাগজ ও মুদ্রিত সামগ্রী; গৃহের যাবতীয় আসবাবপত্র, বাসন-কোসন ও সরঞ্জামাদি, তৈলচিত্র ও স্ট্যাম্প; অফিসের যাবতীয় আসবাব, যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম ও নথি; গৃহপালিত সকলপ্রকার মুরগি ও পাখি; কলকব্জা, যন্ত্রপাতি ও হাতিয়ার ইত্যাদি যাবতীয় মূলধনসামগ্রী; চলাচলের যন্তু ও গাড়ি; যুদ্ধাস্ত্র ও যুদ্ধ-সরঞ্জাম; ক্ষণস্থায়ী বা পঁচনশীল যাবতীয় কৃষিপণ্য; বপন করার জন্য সংরক্ষিত বীজ; যাকাতবর্ষের মধ্যে পেয়ে সে বছরই ব্যয়িত সম্পদ; দাতব্য বা জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের সম্পদ, যা জনস্বার্থে নিয়োজিত; সরকারি মালিকানাধীন নগদ অর্থ, স্বর্ণ-রৌপ্য এবং অন্যান্য সম্পদ। যে ঋণ, ফেরত পাবার আশা নেই (স্থায়ী কুঋণ), তার ওপর যাকাত ধার্য হবে না।

যাকাত কি শুধু রমযান মাসে আদায় করতে হয়?

অনেক মানুষ মনে করে যে, যাকাত শুধু রমযান মাসে আদায়যোগ্য আমল। এ ধারণা ঠিক নয়। নিসাব পরিমাণ সম্পদের উপর এক চান্দ্র বছর অতিবাহিত হলেই সেই সম্পদের যাকাত দেওয়া ফরয। যাকাত ফরয হওয়ার পর দ্রুত আদায় করতে হবে। কিন্তু কোনো কোনো লোককে দেখা যায়, তাদের যাকাতবর্ষ রমযান মাসের আগে, এমনকি ৪/৫ মাস আগে হয়ে যায়। এরপরও তারা তখন যাকাত আদায় করে না; বরং রমযানের অপেক্ষা করতে থাকে। এমন করা আদৌ উচিত নয়। বরং গরীবের পাওনা যত দ্রুত আদায় করা যায় ততই শ্রেয়। হ্যাঁ, যাদের যাকাতবর্ষ রমযান মাসে পূর্ণ হয় তারা রমযানেই আদায় করবেন।

সূত্র : মাসিক আল কাউসার