মৃত ব্যক্তির নিকট আত্মীয়ের যা করা হারাম

পৃথিবীর সব প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। এটাই আল্লাহর বিধান। কিন্তু নিকটজন মৃত্যুবরণ করার পর ছেলে-সন্তানসহ নিকট আত্মীয়গণের জন্য এমন সব কাজ-কর্ম করা হারাম, যা এখানে তুলে ধরা হলো-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কতগুলো বিষয় হারাম করেছেন। যে কাজগুলো মানুষ করে থাকে, যখন তাদের কেউ মারা যায়।

ক. মৃত ব্যক্তির উপর বিলাপ করে কাঁদা। রাসুলুল্লাহ বলেছেন, মানুষের মাঝে দুটি বিষয় রয়েছে যাতে তারা কুফরি করে- ১. বংশের খোঁটা দেয়া, ২. মৃত ব্যক্তির উপর বিলাপ করে কাঁদা। এগুলো নিষেধ।
খ. গালে বা শরীরে আঘাত করা।
গ. কাপড় বা জামার পকেট ছেড়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনে, যে ব্যক্তি গাল চাপড়ায় বা জামার গলা বা পকেট ছিড়ে ফেলে এবং জাহিলিয়াতের আহবানের মতো আহবান করে, সে আমাদের অন্তর্ভূক্ত নয়।
ঘ. চুল কামিয়ে ফেলা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যুর ভয়ে উচ্চ আওয়াজকারীনী মহিলা হতে এবং মাথামুণ্ডনকারীনী মহিলা হতে এবং অধিক কঠিনতা অবলম্বনকারীনী মহিলা হতে পবিত্র ছিলেন।
ঙ. মৃত্যুতে কবিতা প্রকাশ করা।
চ. দিনের কিছু সময় মৃত ব্যক্তির উপর দুঃখ প্রকাশের জন্য কবিতা আবৃত্তি করা।
ছ. মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর সংবাদ তার পক্ষ থেকে ইলান করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শোকসংবাদ ঘোষণায় নিষেধ করেছেন।

সুতরাং মৃতব্যক্তির ওয়ারিশ তথা নিকটাত্মীয়দের জন্য উপরোল্লিখিত কাজগুলো করা হারাম বা অবৈধ। আল্লাহ তাআলা মৃত ব্যক্তির নিকট আত্মীয়দেরকে কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক জানাজা ও দাফন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

মৃত ব্যক্তির জন্য করণীয় কাজ

মানুষ মরণ শীল। এ পৃথিবী ছেড়ে মানুষকে একদিন পরপারে পাড়ি জমাতে হবে। মানুষের শরীর থেকে রূহ বা আত্মা বেরিয়ে গেলেই মানুষ মৃত বলে পরিগণিত হয়। মানুষের মৃত্যুর পর মৃত ব্যক্তির জন্য জীবিত মানুষের কিছু করণীয় রয়েছে। তন্মধ্যে গোসল অন্যতম।

এ প্রসঙ্গে কিছু কথা-

ক. মৃত ব্যক্তির গোসল, কাফন-দাফন তাড়াতাড়ি করা। মৃত ব্যক্তি কারো বাড়িতে বেশি সময় পড়ে থাকা ঠিক নয়।
খ. মৃত ব্যক্তিরে গোসল দেয়া ফরজে কিফায়া।
গ. মৃত ব্যক্তি লা-ওয়ারিস হলে তার গোসলের দায়িত্ব সামষ্টিকভাবে সকল মুসলমানের ওপর।
ঘ. গোসল ব্যতিত কোনো মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা হলে, যারা জানবে তারা সবাই গোনাহগার হবে।
ঙ. গোসল ছাড়া কোনো মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখা হলে এবং উপরে মাটি দেয়া না হলে তাকে কবর থেকে উঠিয়ে গোসল দেয়া আবশ্যক। উপরে মাটি দিয়ে ফেললে কবর থেকে উঠানো ঠিক নয়।
চ. কাফন পরানোর পর যদি মনে হয় যে মৃত ব্যক্তির কোনো অংগ ধৌত করা হয়নি; এমতাবস্থায় কাফন খুলে ধুয়ে নিতে হবে। যদি সামান্য অংশ শুকনা থাকে যেমন কোনো আঙ্গুল বা আঙ্গুল সমপরিমান শুকনো থাকলে কাফন খুলে ধৌত করার প্রয়োজন নেই।
ছ. মৃত ব্যক্তিকে একবার গোসল দেয়া ফরজ। তিনবার দেয়া সুন্নাত।
জ. পুরুষ নারীর এবং নারী পুরুষের গোসল দিতে পারে না। তবে স্ত্রী স্বামীর গোসল দিতে পারবে। স্বামী তার স্ত্রীর গোসল দিতে পারবে না। কারণ স্ত্রীর ইনতিকালের সাথে সাথেই বিয়ে শেষ হয়ে যায়।
ঝ. অপ্রাপ্ত বালক-বালিকাকে নারী-পুরুষ সবাই গোসল দিতে পারবে।
ঞ. মৃত ব্যক্তির প্রিয়জনদেরই গোসল দেয়া উত্তম। পদ্ধতি জানা না থাকলে অন্য কেউ গোসল দিবে।
ট. নাবজাতক শিশু ভূমিষ্ট হওয়ার পর পরই ইন্তিকাল করলে তাকে গোসল দেয়া ফরজ। মৃতাবস্থায় ভূমিষ্ট হলেও গোসল দেয়া ভালো।
মৃত ব্যক্তির গোসলের ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা উক্ত বিষয়ে সতর্ক হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

মৃত্যুর সময় উপস্থিত ব্যক্তিদের করণীয়

মানুষের মৃত্যুর সময় মৃত ব্যক্তির পাশে উপস্থিত ব্যক্তিদের রয়েছে কিছু করণীয়। যা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস থেকে জানা যায়। হাদিসের আলোকে করণীয় কাজগুলো তুলে ধরা হলো-
ক. উপস্থিত ব্যক্তিরা মৃত ব্যক্তির চক্ষুদ্বয় বন্ধ করে দিবে।
খ. মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

হজরত উম্মে সালামা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু সালামার ঘরে প্রবেশ করলেন। সে সময় তার চক্ষুদ্বয় খোলা ছিল। তিনি আবু সালামার চক্ষুদ্বয় বন্ধ করে দিলেন। অতপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আত্মা যখন কবয করা হয় তখন চক্ষু তা অনুসরণ করে। অতপর তার পরিবারের লোকেরা চিৎকার করে। অতপর তিনি বললেন, তোমরা তোমাদের জন্য শুধুমাত্র উত্তম দোয়া কর। কেননা তোমরা যা বল ফেরেশতারা তা সত্যায়িত করেন। অতপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে আল্লাহ! আবু সালামাকে ক্ষমা করে দিন। হিদায়াতপ্রাপ্তদের মধ্যে তার মর্যাদা উঁচু করে দিন এবং তাঁকে তার অতীতদের অন্তর্ভূক্ত করে দিন। এবং তার জন্য তার কবরকে প্রশস্ত করে দিন ও তার কবরকে আলোকিত করে দিন।
গ. উপস্থিত ব্যক্তিরা মৃতব্যক্তির সমস্ত শরীর কাপড় দ্বারা ঢেকে দিবে।
হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মৃত্যুবরণ করলেন, তখন তাঁকে হিবারা চাদর দ্বারা ঢেকে দেয়া হয়েছিল।
ঘ. মৃত ব্যক্তিকে ঘর থেকে বের করা এবং দ্রুত দাফন কর্ম সম্পাদন করা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্রুত দাফন কর্ম সম্পাদন করার তাগিদ দিয়েছেন।
ঙ. ব্যক্তি যে শহরে মৃত্যুবরণ করবে ঐখানেই তাকে দাফন করা উত্তম। অন্য জায়গায় নিলে দ্রুত দাফনের ব্যাঘাত ঘটবে।
চ. মৃত ব্যক্তির সম্পদ হতে তার ঋণ দ্রুততার সঙ্গে পরিশোধ করা।

পরিশেষে…
কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর উপস্থিত লোকজন উপরোক্ত কাজগুলো আদায় করবেন। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এ কাজগুলো যথাযথভাবে সম্পাদন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।