মহানবি [সা.] যেভাবে লেনদেন করতেন!

লেনদেন মানুষের সামগ্রিক জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। লেনদেন ব্যতীত মানুষ সমাজে বাস করতে পারে না। মানুষের লেনদেন সঠিক হলে সে জনসমাজে নন্দিত হয়, আর লেনদেনে গরমিল করলে হয় নিন্দিত। হজরত রাসুলুল্লাহ [সা.] লেনদেনের ব্যাপারে খুব সতর্ক ছিলেন। তার লেনদেন ছিল স্বচ্ছ। অপরের দুঃখ-দুর্দশা দূর করতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ [সা.] অনেক সময় ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়তেন। ঋণের কারণে অনেক ইহুদি পাওনাদার তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহারও করেছেন। তবুও তিনি তাদের কিছু বলেননি। উল্টো ঋণ পরিশোধের সময় গৃহীত ঋণের চেয়ে অতিরিক্ত পরিশোধ করে দিতেন। সর্বাবস্থায় লেনদেনের ব্যাপারে নবি [সা.] অত্যন্ত সাবধান থাকতেন। সর্বোতভাবে সততা বজায় রাখতেন। মদিনায় ইহুদিরাই ছিল সম্পদশালী। অনেক সময় তাদের কাছ থেকে রাসুলুল্লাহ [সা.] ঋণ গ্রহণ করতেন। ইহুদি মহাজনদের অধিকাংশই ছিল হীন প্রকৃতির ও রুক্ষ্ম স্বভাবের। রাসুলুল্লাহ [সা.] তাদের সব ধরনের নিচ ব্যবহার এবং রুক্ষ্মতা অম্লানবদনে সহ্য করতেন। কোনো অবস্থায়ই তাদের সঙ্গে শক্ত ব্যবহার করতেন না।

নবুওয়তপ্রাপ্তির পূর্বে যে সব লোকের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল, তারা সবাই তার সততা ও পরিচ্ছন্ন লেনদেনের প্রশংসা করতেন। এমনকি কুরাইশরা তাকে একবাক্যে আল আমিন [বিশ্বাসী] বলে সম্বোধন করত। নবুওয়তপ্রাপ্তির পর কুরাইশরা যদিও বিদ্বেষ-বিষে জর্জরিত হয়ে গিয়েছিল, তথাপি ধন-সম্পদ আমানত রাখার জন্য সর্বাপেক্ষা নিরাপদ স্থান রাসুলুল্লাহর [সা.] ঘরকেই তারা মনে করত। আরবে সায়েব নামে এক ধনী ব্যবসায়ী ছিলেন। মুসলমান হওয়ার পর সাহাবিরা তাকে হজরত রাসলুল্লাহর [সা.] খেদমতে হাজির করলেন এবং অনেকে প্রশংসা বাণী উচ্চারণ করে তার পরিচয় বর্ণনা করতে লাগলেন। রাসুলুল্লাহ [সা.] ইরশাদ করলেন, আরে! একে আমি তোমাদের সবার চাইতে ভালো জানি। সায়েব তখন বিনীত কণ্ঠে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি এক সময় আমার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন। আমার পিতা-মাতা কোরবান হোক, আপনার সততা ও আচার-ব্যবহার ছিল তুলনাহীন। রাসুলুল্লাহ [সা.] তার সমগ্র জীবনে লেনদেনের ব্যাপারে সততার পরিচয় দিয়ে গেছেন, যা বিশ্বমানবতার জন্য এক আলোকজ্জ্বল শিক্ষাস্বরূপ। তাই হজরত রাসুলুল্লাহকে [সা.] সততার মূর্তপ্রতীক বলা হয়।