বিয়ে-শাদীতে নিষিদ্ধ ৫টি কাজ!

কুরআন-হাদিসের ওপর সমাজিক প্রথাকে প্রাধান্য দিই আমরা। আদৌ ভাবি না, বা ভাবার প্রয়োজনবোধ করি না যে, সমাজিক প্রথাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে কুরআন-হাদিসে বর্ণিত নিষিদ্ধ কাজে জড়িয়ে পড়ছি।

বিয়ে-শাদীর মতো গুরুত্বপূর্ণ আমলের ক্ষেত্রে সামাজিক প্রথা পালন করার ফলে ফেতনা থেকে ঝগড়া পযর্ন্ত গড়ায়। এ নিয়ে বাড়াবাড়িতে একসময় প্রাণ নাসের ঘটনাও আমরা প্রায় পত্রপত্রিকায় দেখি। আসলে অন্যায়-অপরাধের সূত্রপাত শুরু হয় কুরআন-হাদিসের বিধিনিষেধের প্রতি দৃষ্ঠতা প্রদর্শনের কারণে।

বিয়ে-শাদীতে আমরা এমন অনেক কাজ করি, যা নিষিদ্ধ। এ বিষয়ে জামিয়া রাহমানিয়া মুহাম্মদপুর, (আলী এন্ড নূর) ঢাকার শাইখুল হাদিস ও প্রধান মুফতি, মুফতি মনসূরুল হক আলোচনা করেছেন বিয়ে-শাদীতে বর্জনীয় নিষিদ্ধ কর্মবিষয়ে। আসুন দেখে নেই বিষয়গুলো-

১. কনে পক্ষ ছেলেপক্ষের কাছে সোনাদানার শর্তারোপ করতে পারবে না। শর্ত নিষেধ এবং ছেলের পক্ষ থেকেও যৌতুক চাওয়া হারাম।

২. কনের ‘ইযন’-এর জন্য সাক্ষীর কোন প্রয়ােজন নেই। সুতরাং ছেলের পক্ষের লােক ‘ইযন’ শুনতে যাওয়া অনর্থক এবং বেপর্দা। সুতরাং তা নিষেধ। মেয়ের কোন মাহরাম বিবাহের উকিল হওয়ার অনুমতি নিবে।

৩. শর্ত আরােপ করে বরযাত্রীর নামে বরের সাথে অধিক সংখ্যক লােকজন নিয়ে যাওয়া এবং কনের বাড়ীতে মেহমান হয়ে কনের পিতার ওপর বােঝা সৃষ্টি করা আজকের সমাজের একটি জঘন্য কুপ্রথা, যা সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করা আবশ্যক।

৪. ওলীমায় অতিরিক্ত ব্যয় করা কিংবা খুব উঁচু মানের খানার ব্যবস্থা করা জরুরী নয়। বরং সামর্থ্যানুযায়ী খরচ করাই সুন্নাত আদায়ের জন্য যথেষ্ট। যে ওলীমায় শুধু ধনী ও দুনিয়াদার লােকদের দাওয়াত করা হয়, দীনদার ও গরীব-মিসকিনদের দাওয়াত করা হয় না, সে ওলীমাকে হাদীসে নিকৃষ্টতম ওলীমা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সুতরাং এ ধরনের নিকৃষ্ট ওলীমার আয়ােজন থেকে বিরত থাকা উচিত।

৫. ওলীমার মজলিসে হাদিয়া লেন-দেন ঠিক নয়। কেউ হাদিয়া দিতে চাইলে নিজের সুযােগ মত পাঠিয়ে দিবে। প্রচার করবে না। এটাই হাদিয়ার সুন্নাত।

বিবাহে পালনীয় ৮ সুন্নাত

আজ মুসলিম পরিবারগুলোতে বিয়ে হয় বিধর্মীদের রীতিনীতি ও সংস্কৃতির রূপরেখায়। কেমন যেন মুসলিম সমাজও মরণব্যাধী এ অপসংস্কৃতিকে এক প্রকার নিজেদের সঙ্গে মানিয়েও নিয়েছে।

যার ফলে আজ প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েকে সঠিক সময় বিয়ে দিতে পারছেন না তার পরিববার। দম্পত্য জীবনেও নেই সুখের দেখা। এসব আযাব থেকে কেবল মুক্তি পেতে পারি সুন্নাতের সংস্কৃতিকে গ্রহণ করার মাধ্যমে।

এ বিষয়ে জামিয়া রাহমানিয়া মুহাম্মদপুর, (আলী এন্ড নূর) ঢাকার শাইখুল হাদিস ও প্রধান মুফতি, মুফতি মনসূরুল হক আলোচনা করেছেন বিয়েশাদীতে পালনীয় সুন্নাতসমূহ নিয়ে। আসুন দেখে নেই বিষয়গুলো।

১. মাসনূন বিবাহ সাদাসিধে ও অনাড়ম্বর হবে। যা অপচয়, অপব্যয়, বেপর্দা ও বিজাতীয় সংস্কৃতি, গানবাদ্য, ভিডিও-অডিওমুক্ত হবে এবং তাতে যৌতুকের শর্ত বা সামর্থ্যের অধিক মহরানার শর্ত থাকবে না। সূত্র: তাবরানী আউসাত, হাদীস নং- ৩৬১২।

২. সৎ ও খােদাভীরু পাত্র-পাত্রীর সন্ধান করে বিয়ের পয়গাম পাঠানাে। কোন সুযােগে পাত্রী দেখা সম্ভব হলে, দেখে নেয়া মুস্তাহাব। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটা করে পাত্রী দেখানাের যে প্রথা আমাদের সমাজে প্রচলিত, তা সুন্নাতের পরিপন্থী ও পরিত্যাজ্য।  সূত্র: ইমদাদুল ফাতাওয়া, ৪ : ২০০/ বুখারী হাদীস নং- ৫০৯০।

৩. শাওয়াল মাসে এবং জুমআর দিনে মসজিদে বিবাহ সম্পাদন করা। উল্লেখ্য, সকল মাসের যে কোন দিন বিবাহ করা জায়েয আছে। সূত্র: মুসলিম  শরীফ, হাদীস নং- ১৪২৩/ বাইহাকী, হাদীস নং- ১৪৬৯৯।

৪. বিবাহের খবর ব্যাপকভাবে প্রচার করে বিবাহ করা এবং বিবাহের পরে আকদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত লােকদের মাঝে খেজুর বন্টন করা।   সূত্র: বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৫১৪৭।

৫. সামর্থ্যানুযায়ী মহর ধার্য করা। সূত্র: আবু দাউদ: হাদীস নং২১০

৬. বাসর রাতে স্ত্রীর কপালের উপরের চুল হাতে নিয়ে এই দু’আ পড়া; اللهم إني أسألك من خيرها وخير ما جبلت عليه . وأعوذ بك من شرها وشر ما جبلت عليه সূত্র: আবু দাউদ, হাদীস নং- ২১৬০।

৭. স্ত্রীর সঙ্গে প্রথমে অন্তরঙ্গতা সৃষ্টি করবে, তারপর যখনই সহবাস-এর ইচ্ছা হয়, তখন প্রথমে নিম্নোক্ত দুআ পড়ে নেবে ; بسم الله اللهم جنبنا الشيطان وجنب الشيطان ما رزقتنا  সূত্র: মুসলিম, হাদীস নং-১৪৩৪।

বি.দ্র. উপরােক্ত দোয়া না পড়লে শয়তানের তাছীরে বাচ্চার ওপর কু-প্রভাব পড়ে। যেকারণে সন্তান বড় হলে তার মধ্যে ধীরে ধীরে তা প্রকাশ পেতে থাকে। একসময় সে বাচ্চা নাফরমান ও অবাধ্য হয়। সুতরাং পিতা-মাতাকে খুবই সতর্ক থাকা জরুরী।

৮. বাসর রাতের পর দু’হাতে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী ও গরীব-মিসকিনদের সাধ্যনুযায়ী ওলীমা খাওয়ানাের আয়ােজন করা। সূত্র: মুসলিম, হাদীস নং- ১৪২৭।