পাঠকে প্রশ্ন : মেরাজের রজনীতে কি বিশেষ নামাজ-রোজা রয়েছে ?

পাঠকে প্রশ্ন : মেরাজের রজনীতে কি বিশেষ নামাজ-রোজা রয়েছে ?

সমাধান : মেরাজের রজনীর ইবাদতের বিশেষ ফযীলতের ব্যাপারে কোন হাদীস বিদ্যমান নেই। অতএব এ রাতকে শবে ক্বদর শবে বরাতের মত ফযিলতপূর্ণ মনে করা শরিয়তপরিপন্থী। শবে মেরাজের কোন গুরুত্বপূর্ণ আমল ইসলামী শরীয়তে নেই।

এমাসে মাসের রোযা রাখা, বিশেষ প্রকৃতির নামায পড়া সংক্রান্ত সকল হাদীসই জাল ও বানোয়াট। অতএব মেরাজের নামায, মেরাজের রোজা ইত্যাদি বিশেষ আমল বিদআত। কারণ রাসূল সাঃ, সাহাবাগন, ও তাবেয়ীগন তাবে তাবেয়ীগন শবে মেরাজে বিশেষ কোন আমল করেন নি। আর রাসূল সাঃ যা করেন নি, সেটাকে দ্বীন মনে করার নামই হল বিদআত। আর বিদআত পথভ্রষ্টতা। আর পথভ্রষ্টতা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত করে।

-লাতায়েফুল মাআরিফ-১৩১; তাখরীজে ইহইয়া ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন-১/২৯৬ আল লাআলিল মাসনূআ-২/৫৫; তানযীহুশ শরীয়া-২/৮৯ ৷

তবে রজব মাস সম্পর্কিত নিম্নের হাদীসটি দুর্বল হলেও জাল তথা বানোয়াট নয়। আর ফযিলতের ক্ষেত্রে যেহেতু দুর্বল হাদীসও আমল করা যায়।

তাই উক্ত হাদীস অনুযায়ী আমল করা যাবে। হাদিসটি হলো, হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ রজব মাস আসলে পড়তেন- আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শা’বানা ওয়া বাল্লিগনা রামাদ্বান। -মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৬৪৯৪, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৩৪৬ ৷

 

রাসুল (সা.) এর মুজেজাকে অস্বীকার করবার কোনো সুযোগ নেই। কোরআন-হাদিসে মিরাজ এভাবেই বিবৃত হয়েছে। এতে সুনির্দিষ্টভাবে ইবাদত-বন্দেগির কথা নির্ভরযোগ্য কোথাও কিছু বলা হয়নি। এমনকি মিরাজ কবে হয়েছিল তাও সুনির্দিষ্ট নয়। এর বছর মাস দিন নির্ণয়ের ক্ষেত্রে রয়েছে বিস্তর মতপার্থক্য। যা শেষ হবার নয়।

দুইটি বিষয়ে একটু সচেতন হওয়া চাই-
প্রথমত: নবী-জীবনী ও ঐতিহাসিক বর্ণনার কোথাও নির্ভরযোগ্য বিশ্বস্ত সূত্রে মেরাজের তারিখ সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নেই। যা আছে তা খুবই মতবিরোধ পূর্ণ। সিরাতগবেষক ও ঐতিহাসিকদের ষোলটি মতামত দেখা যায়। যার মধ্যে খুবই দুর্বল একটি মতামত হলো সাতাশে রজব শবে মিরাজ। এ মতটি হাদিসবিশারদের নিকট প্রত্যাখ্যাত।

অন্যদিকে নবী (সা.) এর মক্কা-জীবনে প্রকাশিত হয়েছিল মেরাজের মুজেজা। এরপর মদিনায় ছিলেন দীর্ঘ সময়। কিন্তু কখনো তিনি এমন কিছু করেননি বা এমন কোনো ইঙ্গিতও দেননি যাতে মেরাজের তারিখ নির্দিষ্ট করা হয়েছে বা নির্দিষ্ট করা যায়। সাহাবায়ে কেরামও সুনির্দিষ্ট বা অনির্দিষ্ট কোনো দিনে মিরাজ উদযাপন করেননি।

অল্প কথায় কোরআন-হাদিস, বিশ্বস্ত সীরাত, সাহাবাচরিত ও ইতিহাসের কোথাও মিরাজের একক নির্দিষ্ট তারিখের উল্লেখ নেই। সাতাশে রজব তো নয়-ই।

দ্বিতীয়ত: মিরাজকেন্দ্রিক ইবাদত-বন্দেগি। রাতে বিশেষ নিয়মে নামাজ, দিনে রোজাসহ নানান আনুষ্ঠানিকতা—প্রচলিত আমাদের সমাজে। বস্তুত নবী-জীবন ও সাহাবাচরিতের কোথাও মেরাজের নামাজ-রোজা নামের কোনো ইবাদত-বন্দেগির সন্ধান আমারা পায়নি। ইসলামের সকল ইবাদত-বন্দেগির সময়-কাল হয়তো ধরন-করণে নির্দিষ্ট, নির্ধারিত ও আদিষ্ট, নয়তো ইশারায় বিবৃত ও উৎসাহ দেওয়ার মাধ্যমে স্বীকৃত। কিন্তু মিরাজ বিষয়ে এর সবকিছুই অনুপস্থিত। এটা কেবলই রসম-রেওয়াজ আর ভ্রান্তিবিলাস।

সাতাশে রজবে শবে মিরাজ নামে যে অপসংস্কৃতি এবং ইবাদত-বন্দেগির নামে যে রসম রেওয়াজ রয়েছে, তা শরিয়ত বিবর্জিত ও অসমর্থিত। সর্বান্তকরণে সুন্নাহ পরিপন্থি।