পাঠকে প্রশ্ন :আযান বা তিলাওয়াত রিংটোন হিসাবে ব্যবহার করা যাবে কি?

পাঠকে প্রশ্ন : অনেকে রিংটোন হিসাবে ঘণ্টা, বাজনা ইত্যাদির পরিবর্তে আযান, যিকর ও তিলাওয়াতের ব্যবহারকে পছন্দ করে। জানতে চাই এতে শরীয়তের দৃষ্টিতে কোনো খারাপী আছে কি না?

উত্তর : তিলাওয়াত, যিকর ও তাসবীহ সবকিছুই অতীব মর্যাদাপূর্ণ বিষয়। আযান আল্লাহ তাআলার বড়ত্ব ও তাসবীহ সম্বলিত কিছু বাক্যের সমষ্টি যা শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিক তথা ‘শিআর’। এগুলোর ব্যবহার একমাত্র আল্লাহ তাআলাকে রাজি-খুশি করার উদ্দেশ্যে শরীয়তের নিয়ম অনুযায়ী হতে হবে।

শরীয়তে এগুলোর ব্যবহার-ক্ষেত্র সুনির্ধারিত। মোবাইলের রিংটোন হিসাবে এগুলোর প্রয়োগ অপব্যবহারের অন্তর্ভুক্ত। কারণ, মোবাইলে রিং এসেছে, কেউ কথা বলতে চায় এই খবর দেওয়ার জন্য আল্লাহ তাআলার পবিত্র কালাম ওহী, জিকর ও তাসবীহের ব্যবহার যে এগুলোর অপাত্রে ব্যবহার তা বলাই বাহুল্য।

ক্রেতাকে আকৃষ্ট করার জন্য বিক্রেতার জোরে জোরে সুবহানাল্লাহ বলা, তদ্রূপ প্রহরী জাগ্রত আছে একথা বুঝানোর জন্য জোরে জোরে যিকর করাকেই ফিকহবিদগণ অপব্যবহার হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন। তাহলে মোবাইলে কল এসেছে এ খবর দেওয়ার জন্য এগুলোর ব্যবহার যে কেমন হবে তা তো বলার অপেক্ষাই রাখে না।

উপরন্তু রিংটোন হিসাবে এগুলোর ব্যবহারে আরো অন্যান্য শরয়ী খারাবী রয়েছে যেমন : (ক) রিং আসলে কুরআনের তিলাওয়াত বেজে  উঠছে,  কিন্তু  অনেক  ক্ষেত্রে   ব্যস্ততার দরুণ তিলাওয়াতের প্রতি ভ্রূক্ষেপ করারই সুযোগ হয় না। তদ্রূপ কে রিং করেছে তা দেখা ও কল রিসিভ করার ব্যস্ততা তো লেগেই থাকে এ কারণেও তিলাওয়াতের আদব রক্ষা করে শ্রবণ করা হয় না।

(খ) রিং আসলে যেহেতু রিসিভের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে এবং এটিই মূল উদ্দেশ্য থাকে তাই আয়াতের যেকোনো স্থানেই তিলাওয়াত চলতে থাক সে দিকে ভ্রূক্ষেপ না করে রিসিভ করে ফেলে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে উচ্চারিত অংশের বিবেচনায় আয়াতের অর্থ বিকৃত হয়ে যায়।

(গ) মোবাইল নিয়ে টয়লেট কিংবা বাথরুমে প্রবেশের পর রিং আসলে অপবিত্র স্থানে আল্লাহ তাআলার পবিত্র কালাম, যিকর ও আযান বেজে উঠবে। এতে এগুলোর পবিত্রতা ক্ষুণ্ণ হয়। মোটকথা অনেক কারণেই তিলাওয়াত, আযান ও জিকরকে রিংটোন হিসাবে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা জরুরী।

তথ্যসূত্র : -আততিবয়ান ফী আদাবি হামালাতিল কুরআন-ইমাম নববী ৪৬, হক্কুততিলাওয়া- হুসাইনী শাইখ উসমান ৪০১, ফাতাওয়া আলমগীরী ৫/৩১৫, আলমুগনী ৪/৪৮২, রদ্দুল মুহতার ১/৫১৮, ১/৫৪৬, আলাতে জাদীদা, মুফতী মুহাম্মাদ শফী রহ., আলকাফী ১/৩৭৬, আলআশবাহ ৩৫/মাসিক আল-কাউসার।

নামাজে রিং বেজে উঠলে কী করবেন?

আওয়ার ইসলাম :  কোনো কারণে যদি নামাজের আগে মোবাইলের রিং বন্ধ করা না হয় আর নামাজ পড়াবস্থায় রিং বেজে উঠে তখন করণীয় কি? নামাজে থেকে রিং বন্ধ করে দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা আছে কি না? নামাজ নষ্ট না করে রিং বন্ধ করার কোনো সুযোগ আছে কি? এ লেখায় তার বিস্তারিত উল্লেখ করা হলো –

১. এক হাত দ্বারা রিং বন্ধ করা

দুই হাত ব্যবহার না করে নামাজের আপন অবস্থাতে থেকেই এক হাতের সাহায্যে মোবাইল পকেটে রেখেই কোনো বাটন চেপে রিং বন্ধ করে দিবে। আর পকেট থেকে বের করার প্রয়োজন হলেও এক হাত দ্বারাই করবে। মোবাইল বের করে পকেটের কাছে রেখেই না দেখে দ্রুত বন্ধ করে পকেটে রেখে দিবে।

জেনে রাখা প্রয়োজন যে, নামাজে প্রয়োজনে এক হাত কোনো কাজে ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। যেমন, টুপি ওঠানোর জন্য, জামার হাতা নামানোর জন্য, সিজদার স্থানের কংকর সরানোর জন্য, শরীরের কোন স্থান বিশেষ প্রয়োজনে চুলকানোর জন্য ইত্যাদি।

২.  হাত দ্বারা দেখে বন্ধ করা

এক হাত দ্বারা বন্ধ করতে গিয়ে মোবাইল পকেট থেকে বের করে দেখে দেখে বন্ধ করা যাবে না। কারণ, এমনটি (করলে যদিও দুই হাত ব্যবহার হচ্ছে না, কিন্তু মোবাইল দেখে দেখে বন্ধ করা অবস্থায় এ ব্যক্তিকে কেউ দেখলে সে নামাজে আছে বলে মনে করবে না।

আর নামাজ অবস্থায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে নামায ভেঙে যায়। তাই নামাজ অবস্থায় মোবাইল দেখে দেখে বন্ধ করার কোন সুযোগ নেই। এমনকি একসাথে দুই হাত ব্যবহার করা যাবে না। যদি এক সাথে দুই হাত ব্যবহার করে তবে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে।

৩. রিং বন্ধের জন্য সিজদা থেকে উঠে গেলে

সিজদাবস্থায় রিং বেজে উঠলে কেউ কেউ সিজদা থেকে প্রায় বসে গিয়ে মোবাইল বের করে বন্ধ করে থাকে। অথচ তখনো ইমাম-মুসল্লী সকলেই সিজদাতেই থাকে। নামাজের এ অবস্থা থেকে মোবাইল বন্ধের জন্য বসে যাওয়া অতঃপর মোবাইল বন্ধ করাতে তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় ব্যয় না হলেও নামায ভেঙ্গে যাবে।

কারণ, যেখানে দুই হাতের ব্যবহারকেই নামাজ ভঙ্গের কারণ বলা হয়েছে সেখানে পুরো শরীরকে নামাযের অবস্থা থেকে সরিয়ে নিয়ে আসা নিঃসন্দেহে নামাজ ভঙ্গের কারণ হবে। এ ছাড়া এ অবস্থায় কোনো আগন্তুক তাকে দেখলে সে নামাযে নেই বলেই মনে করবে। এটিও আমলে কাসীরের অন্তর্ভুক্ত। যা নামাজ নষ্টকারী।

৪. নামাজে একাধিকবার রিং বন্ধ করা

তিনবার বিশুদ্ধভাবে ‘সুবহানা রাবিবয়াল আযীম’ বা ‘সুবহানা রাবিবয়াল আ’লা’ বলা যায় এ পরিমাণ সময়ের ভিতর উপরন্তু দুইবার পর্যন্ত এক হাতের সাহায্যে উপরোক্ত ‘ক’ তে উল্লেখিত নিয়মে রিং বন্ধ করা যাবে। এ সময়ের ভিতর দুইবারের বেশি বন্ধ করা যাবে না। যদি করে তবে নামায নষ্ট হয়ে যাবে।

হাঁ, একবার বা দুই বার বন্ধ করার পর তিন তাসবীহ পরিমাণ বিলম্বে আবার রিং বেজে উঠলে তখন বন্ধ করা যাবে। মোটকথা তিন তাসবীহ বলা যায় এ সময়ের ভিতর তিনবার রিং বন্ধের জন্য এক হাতও ব্যবহার করা যাবে না। এতে নামায নষ্ট হয়ে যাবে।

৫. মোবাইল বন্ধের জন্য দুই হাত ব্যবহারের প্রয়োজন হলে

নামাযে খুশুখুযুর গুরুত্ব অনেক বেশি। কোন নামাযীর মল-মূত্রের বেগ হওয়ার দরুণ খুশুখুযু বিঘ্নিত হলে তার জন্য নামায ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ফিকহের কিতাবাদিতে এ ক্ষেত্রে নামায ছেড়ে দেওয়াকে উত্তম বলা হয়েছে। কেউ কেউ ওয়াজিবও বলেছেন।

তাহলে নামায অবস্থায় মোবাইল বেজে উঠলে যার মোবাইল শুধু তার নামাযেরই বিঘ্ন ঘটায় না বরং আশপাশের মুসল্লীদেরও খুশুখুযু বিঘ্নিত হয়।

সুতরাং এক্ষেত্রে নামায নষ্ট না করে বন্ধ করা সম্ভব না হলে নামায ছেড়ে দিয়ে হলেও মোবাইল বন্ধ করা জায়েয তো বটেই বরং এমনটি করাই কর্তব্য। আর রিংটোন যদি গান বা মিউজিকের হয় তবে এর খারাবিতো আরো অধিক। সুতরাং এক্ষেত্রে নামায ছেড়ে দেওয়া না জায়েয হওয়া সম্পর্কিত কথাটি ঠিক নয়।

সুতরাং এ ধরণের পরিস্থিতিতে নামাযে থেকে উপরোক্ত  নিয়ম অনুযায়ী একহাত দিয়ে বন্ধ করা সম্ভব হলে তাই করবে। কিন্তু তা সম্ভব না হলে নিজের নামায ছেড়ে দিয়ে হলেও রিং বন্ধ করে দিবে। অতঃপর মাসবুকের ন্যায় আবার নতুন করে জামাতে শরীক হবে। আল-কাউসার।